ঢাকা১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘মার্চ ফর জাস্টিস’: জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও গণস্বাক্ষর

বার্তা বিভাগ
আগস্ট ১, ২০২৪ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

জাবি প্রতিনিধি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও কর্মসূচিতে অংশ নেন।

৩১ জুলাই (বুধবার) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

একই স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, “সরকার একটি মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই দেশে এখন কোনো গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা আছে- এটি মনে করার কোনো কারণ অবশিষ্ট নেই। সরকার আজ পর্যন্ত এত নির্মমতা, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন-নিপীড়নের পরেও কোনো প্রকার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেনি। অথচ আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছি, এই সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে একজন মন্ত্রীর কী পরিমাণ দায়-দায়িত্ব রয়েছে। তিনি একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার পরেই কিন্ত সংর্ঘষ ছড়িয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই আন্দোলন এখন আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন হয়ে গেছে। একটি রাষ্ট্র যখন সংকটে পতিত হয়, রাষ্ট্রের যখন আমূল পরিবর্তনের দরকার হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সৃষ্টিই হয়েছে রাষ্ট্রকে পথ দেখানোর জন্য।

“রাষ্ট্রের যে ক্ষতি তার পুনঃনির্মাণ করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। সরকারকে বলতে চাই, আপনারা যে ভয়ের সংস্কৃতি দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন সেটিতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা সত্য স্বীকার করতে শিখুন, ভুল স্বীকার করতে শিখুন। প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করুন।”

এ সময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, “সরকার আশা করছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তর হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যখন রায় হবে, হল যখন বন্ধ থাকবে, ততক্ষণে সবকিছু শান্ত করে ফেলা যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে তার মধ্যে পুরো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কতগুলো উসকানি দেওয়ার কারণে।

তিনি বলেন, “নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুতে বাংলাদেশের এমন কোনো বর্গ নেই যেখানে একান্তে মানুষ হাহাকার না করছে। কান পাতলেই সরকার ও সরকারপন্থি গায়েনরা এসব কথা শুনতে পারতো। মানুষজন কিভাবে শোক করছে। এই মুহূর্তে যে ধরনের ধরপাকড় চলছে সেই মডেলটি খুবই পরিচিত। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে এমন ধর-পাকড়ের ইতিহাস নেই। বাংলাদেশের জেলায়-জেলায়, মহকুমায়-মহকুমায়, থানায়-থানায় এমনকি শিক্ষার্থী শুধু না; সাধারণ শ্রমিকদের টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সরকার যেমন গোয়ার্তুমি করে ‘নো রিটার্নে’ গেছে; আমাদেরও হকের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ যেতে হবে।”

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা বলেন, “যারা আজকে আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করছে, জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বেচে খেতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো একক দলের চেতনা নয়। স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাম্যের চেতনা সারাবাংলার মানুষের চেতনা। অতএব দিনের পর দিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে মানুষের ওপর স্বৈরশাসন চালাবেন, দুঃশাসন চালাবেন, গুলি চালাবেন, তাহলে জনগণ আপনাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মের নাম করে এরাই জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। আর এখন আপনারা স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।”

তিনি বলেন, “আন্দোলনকে দমন করার জন্য শাসকগোষ্ঠী প্রতিদিন নতুন নতুন কাহিনি তৈরি করে। শুনেছি, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নাকি নিষিদ্ধ করতে চায় সরকার। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার দাবি তো আরও অনেক আগেই ওঠেছিলো। জাহানারা ইমাম যখন রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন সেই আন্দোলনে সাধারণ জনতার দাবি ছিলো জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কিন্তু সেই জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়েই একসঙ্গে হরতাল পালন করলেন, একসঙ্গেই কর্মসূচি পালন করলেন। তখন তো আপনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেন নাই।”

“এই সময় কেন আপনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছেন? আমাদের কাছে এটি বড় প্রশ্ন হিসেবে হাজির হচ্ছে। আপনি আন্দোলনকে থামানোর জন্য আরও একটি কৌশল ব্যবহার করছেন কিনা সেটি আমাদের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করছে।”

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম রিহানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করা হয়। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি। যোগাযোগ: হটলাইন: +8801602122404 ,  +8801746765793 (Whatsapp), ই-মেইল: thesocialtimes24@gmail.com