ঢাকা১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গাইবান্ধায় নদ-নদীর ভাঙনে নিঃস্ব চরবাসী, নেই স্থায়ী ঠিকানা

বার্তা বিভাগ
জুলাই ৪, ২০২৪ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ  সম্প্রতি বছর গুলোতে ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের মানচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । নদটির বাক পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন শত বছরের স্থায়ী চর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অপরদিকে কোথাও কোথাও জেগে উঠছে নতুন চর । যাযাবর চরবাসী তাই জীবিকার তাগিদে সব হারিয়ে শূন্য হাতে নতুন জেগে ওঠা চরে স্বপ্ন বুনন করতে চলে যায় । ভাঙ্গা গড়ার এমন খেলায় অভ্যস্ত চরবাসী জেগে ওঠা নতুন চরে আবার সংসার সাজায় । বছর জুড়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত এই জনপদের মানুষ অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সব হারিয়ে যাযাবরের মতো অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এসব দেখে মনে হবে চরবাসীদের জীবন পোকামাকড়ের চেয়েও বেশি অনিশ্চিত।

ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে গাইবান্ধার চার দিকে রয়েছে ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৪ টি নদ-নদী । এই জেলার উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা ও পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী। এসব নদ নদীর বুকে জেগে ওঠা ১৬৫ টির অধিক চরে বসবাস করছে জেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ । আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এই বৃহৎ জনপদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নদী ভাঙ্গন । প্রতিবছর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ছে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা শতবর্ষী এসব চর । ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কোন প্রকল্প না থাকায় প্রকৃতির নিয়মে নিয়মিত ভাঙা গড়ার খেলা চলে বিস্তীর্ণ এই জনপদে।

গুগল ম্যাপের ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পৃথক দুটি স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ভাঙনে ব্রহ্মপুত্র নদের মানচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । নদীর পূর্ব তীর জুড়ে দীর্ঘ কয়েক শত কিলোমিটার শক্তিশালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকায় নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা অসংখ্য স্থায়ী চরগুলো ভাঙনে পুরোপুরি বিলীন হয়েছে অপরদিকে কোথাও কোথাও জেগে উঠছে নতুন চর। কাশবনে আচ্ছাদিত এসব নতুন নতুন চর গুগল স্যাটেলাইট ইমেজে সবুজ কার্পেট হিসেবে ধরা দিয়েছে ।

ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে পড়া শতবর্ষী কয়েকটি চরের মধ্যে অন্যতম গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দের পাড়া চর । ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরের রাজধানী খ্যাত এই জনপদটি গত পাঁচ বছর আগেও ছিল বেশ সমৃদ্ধ। চরটিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় স্বনির্ভর চরে পরিণত হয় । সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে চারটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় চরে বসবাস করা মানুষেরা আধুনিক জীবনের স্বাদ পেয়েছিলো। তবে ব্রহ্মপুত্রের কড়াল নজর লাগে চরটির উপর। ফলে গত ৫ বছরে ভয়াবহ ভাঙনে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

কুন্দের পাড়ায় বসবাস করা কয়েকজন চরবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ বছরে ৮ বার ভাঙনের কবলে পড়ে শতবর্ষী এই চরটি। তীব্র ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এই চরের জনসংখ্যা বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

চরটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটি শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে। কারণ হিসেবে বিদ্যালয় দুটির প্রধান শিক্ষকরা বলেন, অব্যাহত ভাঙনের ফলে কুন্দেরপাড়া চরের অনেক বাসিন্দা অন্য চরে বসতি স্থাপন করেছে । দুরত্ব বেশি ও ভঙ্গুর যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

কুন্দের পড়া কেবলাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানা বলেন, দেড় বছর আগে আমাদের বিদ্যালয়ের ঘরটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে কুন্দের পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি মাত্র ঘরে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে । পড়ালেখার জন্য অবকাঠামো না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না ।

এদিকে, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শিক্ষার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি। স্থায়ী চরগুলোর পলিমাটিতে ভুট্টা, মরিচ,বাদাম ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন হতো বছর জুড়ে কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে প্রতি বছর চরাঞ্চলের শতশত হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ।

চর সিধাইয়ের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, চলতি বছর আমার ১ বিঘা আবাদি জমি ভাঙনে বিলীন হয়েছে। চরবাসীদের অন্যতম সমস্যা এখন নদী ভাঙন । আমরা দূর্যোগের সাথে মানিয়ে চলতে শিখলেও নদী ভাঙনের ক্ষতিটি অপুরণীয়। এখানের আমাদের জীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে পারে না তাই জমির নিরাপত্তা পাব কিভাবে!

চরের সমস্যা সমাধানে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, চরের ভাঙন রোধের স্থায়ী সমাধান হতে পারে বাঁধ নির্মাণ তবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সম্ভব নয় । নদীর মধ্যবর্তী স্থানে চর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করা হলে তার প্রভাব সরাসরি নদীর তীরে থাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এসে পড়বে । চর রক্ষায় আমরা বর্তমানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি যা বছরজুড়ে চলমান থাকে ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে হয়। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি। যোগাযোগ: হটলাইন: +8801602122404 ,  +8801746765793 (Whatsapp), ই-মেইল: [email protected]