আজকের চর কাজল , চর শিবা বা চর কপাল বেড়া অতীতে এমন ছিল না। এখন থেকে ১৫ অথবা ২০ বছর আগের কথা। যখন একেবারেই ভিন্ন রূপে ছিল পটুয়াখালি জেলার গলাচিপা থানাধীন এ চর অঞ্চলগুলো। যার চার পাশে নদী বেষ্টিত। একটি দ্বীপের ন্যায় এ চরের অবস্থান।
রাস্তাঘাট তেমন ছিল না। লতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ছোট ছোট নদী আর খাল। বর্ষায় নদী আর খালে ছিল ভরা যৌবন। এমন একটি পরিচিত খালের নাম গরু হালিয়ার খাল। ছিল প্রচন্ড স্রোত। বর্ষার জোয়ারে এ অঞ্চলের চিত্র অনেকটাই পাল্টে যেত। মনে হত, নদীর মাঝে ভাসমান বিচ্ছিন্ন কতগুলো গ্রাম।
চার দিকে পানি আর পানি। আবার ভাটায় যখন পানি নামতে শুরু করত, কখন চারদিক থেকে পানির স্রোতের শব্দ ভেসে আসত।
ছিল না নিকটস্থ কোন হাসপাতাল বা হাট বাজার। ছিল না তেমন স্কুল কলেজ। চর কাজল, চর বিশ্বাস, চর শিবা ও কপাল বেড়ায় শুধুমাত্র স্কুল ছিল।
অনেক কষ্ট করে দীর্ঘ কাদা-মাটির পথ পাড়ি দিয়ে হাট বাজার করতে হতো। ছিল ছোট ছোট খাল। এগুলো নৌকা বা বেলা দিয়ে পার হতে হতো। অনেকেই আবার গামছা নিয়ে যেতেন। কেননা অনেক সময় এসব নৌকা বা বেলা ঘাটে থাকত না। যাতে গামছা পড়ে সাঁতরিয়ে পার হওয়া যায়।
তবে এখানকার খাল বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ ছিল। নানা জাতের চিংড়ি, কোড়াল, বোয়াল, বাইলা ও অন্যান্য সামূদ্রিক মাছ সহজেই পাওয়া যেত। তবে মাছের তেমন বাজার মূল্য ছিল না এ অঞ্চলটিতে। খুবই সস্তায় বিক্রি করা হতো এসব মাছ।
অপর দিকে এখানকার জমিতে ফলত প্রচুর পরিমাণে ফসল। এসব ফসলের মাঝে ধান ছিল অন্যতম। এছাড়াও বাদাম, মরিচ, মিষ্টি আলু, নানা জাতের ডাল ও কুমড়া ইত্যাদি এখানে প্রচুর পরিমাণে চাষাবাদ করা হতো।
রাস্তাঘাট না থাকায় চরম ভোগান্তিতে ছিল এখানকার মানুষ। কপাল বেড়ায় ছিল মাত্র দু থেকে তিনটি কাচা রাস্তা। যা বর্ষায় চলাচলে অনেকটাই অনুপযোগি ছিল। এদিকে হাজির হাট বাজার থেকে উত্তর চর কপাল বেড়া বা গরু হালিয়ার খাল পর্যন্ত কোন রাস্তা ছিল না। অনেক কষ্ট করে এখানকার লোকজন হাটবাজার করতে হতো।
বর্ষায় এ ভোগান্তির মাত্রা ছিল অবর্ণনীয়। অনেক কষ্ট করে এখানকার বাসিন্দারা জীবনযাপন করতেন।
সব কিছুর পরও আজকের চিত্র আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট বাজার সব মিলে বসবাস যোগ্য একটি অঞ্চল। তবে এসব উন্নয়নে যারা অবদান রেখে গেছেন তারা এখানকার মানুষের মনে শ্রদ্ধার সাথে অমর হয়ে থাকবেন।- ইমরুল কায়েস