আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে ২০০৪ সাল থেকে লাল মরিচের হাট বসে। সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবারের প্রতি হাটে কোটি টাকার অধিক লাল শুকনো মরিচ বেচা-কেনা হয়। ফেব্রুয়ারীর মাঝা মাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রি হয়।
খুব সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই ফুলছড়ি হাটে আসতে শুরু করে এই শুকনো মরিচ। নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেণন্ডাবাড়ি, উরিয়া, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল
এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশিগঞ্জের কয়েটি চর থেকে মরিচ বিক্রি করতে আসেন কৃষক ও পাইকাররা। পরে বস্তা বোঝাই হয়ে ট্রাক ও ভটভটিতে মরিচ চলে যায় বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ফুলছড়ির মরিচ হাট নামে খ্যাত এই হাট এখন লাল মরিচে রঙ্গিন হয়ে উঠেছে।
গাইবান্ধার লাল শুকনো মরিচের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী বেষ্টিত জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত শত বিঘা জমিতে মরিচের ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাবার পরই চরের পলি মাটিতে বীজ বপনের পর ২/৩ বার নিড়ানি দিলেই বিনা সারে বিস্তর ফলন হয়। মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার কারণে চরাঞ্চলের মরিচের রং যেমন সুন্দর তেমনি আকারও বড় হয়।
এ কারণে বগুড়া, নওগাঁ, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিন্তে আসেন। তবে বেশী মরিচ কেনেন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী নামি দামি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মরিচ চাষিরা জানান, বিঘা প্রতি কাঁচা মরিচ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২০/২৫ হাজার টাকা। বিঘায় ৫০ মণের অধিক মরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচা মরিচ জমিতে লাল রং হয়ে পাকার পর তা রোদে শুকিয়ে ১০ মণের মতো হয়। শুকাতে শ্রমিকসহ অন্যান্য আরও খরচ হয় প্রায় হাজার দশেক টাকা। সে হিসেবে ১০ মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যয় বাদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হয়।
হাট ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা জানান, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে হাট বসে। এবার প্রতি মণ মরিচ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। যার বাজার দর প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়াও উৎপাদিত মরিচের ভালো দাম পেয়ে চাষীরাও ভীষণ খুশি।