আনোয়ার হোসেন,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার ৭ উপজেলার ইটভাটা গুলোতে ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির উর্বর অংশ টপ সয়েল। যা কৃষি ও পরিবেশের ওপর মারাত্নক ক্ষতির প্রভাব ফেলছে।
জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলায় ১’শ ৮০টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৩/১৪টির পরিবেশ অধিদপ্তরেরআ অনুমোদন রয়েছে। বাকি ভাটা গুলো চলছে মালিকদের ক্ষমতার দাপটে। এ সব ইট ভাটার একটি ইট তৈরিতে প্রায় ৪ কেজি মাটির প্রয়োজন। প্রতিটি ইট ভাটায় প্রতি বছর ১০-৩০ লাখ ইট উৎপাদিত হয়। এ হিসেবে প্রতিবছর এ জেলায় কৃষি জমিগুলো বিপুল পরিমাণ মাটির উপরিভাগ হারাচ্ছে। এসব ইট ভাটায় শত শত ট্রাক্টর ও ট্রলি দিয়ে কৃষি জমির টপ সয়েল পরিবহন করতে দেখা গেলেও এর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ইটভাটার শ্রমিক মজিদুল ইসলাম বলেন, ‘জমির ওপরের মাটি ছাড়া ইট তৈরি করা সম্ভব নয়। এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছ থেকে মাটির ওপরের অংশ কিনে ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। এ মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। ট্রাক্টর (কাঁকড়া) দিয়ে পরিবহন করায় ব্যাবহার
অনুপযোগী হয়ে পড়ছে রাস্তা-ঘাট। দূর্ঘটনার আশঙ্কার পাশা-পাশি ধুলা-বালির কারণে পরিবেশের মারাত্নক বিপর্যয় ঘটছে। এসব ট্রাক্টর (কাঁকড়া) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলাচল করায় বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ায় বিঘ্ন ঘটার পাশা-পাশি লোকজনের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ খোরসেদ আলম বলেন, মাটির উপরিভাগ থেকে ৫-১০ ইঞ্চি স্তর পর্যন্ত হলো মাটির প্রাণ, একে টপ সয়েল বলা হয়। এতে জৈব পদার্থ ও অণুজীবের সর্বাধিক ঘনত্ব থাকে এবং মাটির এই অংশে ফসল উৎপাদিত হয়।
যদি কৃষিজমি তার ওপরের মাটি হারিয়ে ফেলে, তবে এটি স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগে। মাটির উপরি অংশ হারিয়ে গেলে কৃষকরা কৃষিজমি থেকে ফসলের উৎপাদন কম পান।
‘মাটির উপরি অংশে বেশিরভাগ জৈব পদার্থ ও হিউমাস থাকে। বেশিরভাগ পরজীবীও এই স্তরে বাস করে, যা উদ্ভিদকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেও সাহায্য করে, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ফলে মাটির এই স্তর বিচ্ছিন্ন হলে মাটি প্রাণহীন হয়ে যায়। মাটির টপ সয়েল উত্তোলন বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার কৃষক ফুলমিয়া বলেন, মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে মাটির উপরি অংশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এক বিঘা জমির ওপরের মাটি বিক্রি করে ১৫-২০ হাজার টাকা পাই। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষিজমির ২-৩ ফুট পর্যন্ত কেটে নিয়ে যান।
কৃষক আশরাফ আলী (৬০) বলেন, প্রায় ৪ বছর আগে ৩ বিঘা জমির ওপরের মাটি স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রি করি। পরে, বিপুল পরিমাণ সার দিয়েও সে জমি থেকে আশানুরূপ ফসল পাইনি।’
‘জমির উপরি অংশ বিক্রি করতে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু, পাশের জমির মালিক তা করায় আমি বাধ্য হয়েছি।
রংপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘জনবল সংকট থাকায় সবসময় অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। পরিবেশ অধিদপ্তর যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কৃষি জমির টপ সয়েল সংগ্রহের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে।