আনোয়ার হোসেন,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ “শিক্ষালয় মোদের শিক্ষালয়, এখানে সভ্যতারি ফুল ফুটানো হয়”। সত্য সত্যিই সভ্যতার ফুল ফুটানো হচ্ছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সকল শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক বিকাশ সাধনে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে নেই এ বিদ্যালয়টি।
জানা গেছে, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করণে ১৯৮৮ সালে পলাশবাড়ী উপজেলার নিভৃত পল্লী বরিশাল ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয় দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ২০১৬ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে বৃহত্তর পরিসরে নেয়া হয়েছে বৈচিত্র্যময় ও শিশু বান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচী। একটি আদর্শ, আনন্দমূখর, শিশুবান্ধব, শিখন পরিবেশে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে আসার আকর্ষনের জন্য প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ হতে শুরু করে ভবনের বারান্দা, অফিসকক্ষ সজ্জিত করা হয়েছে শিক্ষামূলক বিভিন্ন ছবি ও পাঠ্য বইয়ের অংশ বিশেষ ব্যবহার করে।
প্রতিটি দেয়াল যেন এক একটি পাঠ্যবই। বিদ্যালয় ভবনের সামনে এবং ছাদে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন ফুলের বাগান। রয়েছে খেলার প্রশস্ত মাঠ,সাইকেল রাখার ছাউনিসহ খেলাধুলার বিভিন্ন উপকরণ। এখানে সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগও রয়েছে। পাশাপাশি শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সংরক্ষন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত বিভিন্ন ধরনের বই ও ছবি।
এ বিদ্যালয়ে ২’শ ৬১জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছ ৬ জন মেধাবী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক। পরিচালনা পরিষদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর শিক্ষকদের আন্তরিকতায় বিদ্যালয়টি অর্জন করে আসছে কাঙ্খিত ফলাফল। এ অর্জনকে অগ্রগামী করতে হাতে নেয়া হয়েছে আরও বিভিন্ন কার্যক্রম।
বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা, কুইজ প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতা, শিক্ষাসফর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতাসহ যথাযথ মর্যাদার সাথে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিম জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাপদক ২০২২ এ উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিম জানান, ২০১৬ সালে তিনি এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এর আগে বিদ্যালয়টিতে এমন পরিবেশ ছিল না। এমনকি যাতায়াতের রাস্তাও ছিল না। যোগদানের পর থেকে জাতীয় পুরুষ্কার প্রাপ্ত শিবরামের শিক্ষা কার্যক্রম এবং কলা-কৌশলকে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে আসছেন। কারণ প্রতিটি শ্রেণিতে অর্জিত ভালো ফলা-ফল বিনির্মান করবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর আগামীর ভিত। তাই শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে সর্বোত্তম সুনাগরিক ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আধুনিক বিশ্ব তথা দেশ ও সমাজের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বর্তমান প্রগতিশীল সংস্কারবাদী তরুণ প্রজন্মের সাহসী ও অভিজ্ঞ পরিচালনা পরিষদসহ আধুনিক মনস্ক দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগীতায় নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সফল করার জন্য অত্র এলাকার সকলের পরামর্শ ও আন্তরিক সহযোগীতা একান্তভাবে কাম্য।
বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি
মাহাবুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার অগ্রগতি নির্ভর করে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর। আগামীতে এ বিদ্যালয় যেন উপজেলা তথা জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করতে পারে এমন প্রত্যাশা আমাদের সকলের।