কেএম আজাদ রহমান, আগৈলঝাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে প্রত্যন্ত গ্রামের কচি-কাচা ছেলে-মেয়েদের মাঝে
শিক্ষার আলো বিলিয়ে আসছে রমনী কান্ত বেপারীর পাঠশালা। এ জন্য
তিনি কোন নির্ধারিত টাকা-পয়সা নেন না, শিক্ষাথীদের
অভিভাবকদের আর্থিক আবস্থা বুঝে মাস শেষে যে যা দেয় তাই
নিয়েই তিনি খুশি।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের
রাখাল বেপারীর ছেলে রমনী কান্ত বেপারী ১৯৭১ সালের পূর্বে স্কুল ছাত্র
থাকাবস্থায় এলাকার গরিব-অসহায় পরিবারের সন্তানদের মাঝে শিক্ষার
আলো ছরিয়ে দিতে প্রাইভোট পরানো শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩
সালে রমনী কান্ত বেপারী এসএসসি পাশ করে, ইচ্ছে করলে ওই সময়
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা পেশায় চাকুরীতে যেতে পারতেন
কিন্তু ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের মায়ায় পরে তিনি যাননি। তিনি
রাংতা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির আঙ্গিনায় শিশু শিক্ষার্থীদের
নিয়মিত পাঠদান দিয়ে আসছেন। দেখতে-দেখতে প্রায় ৬০ বছর ধরে
তিনি এ শিক্ষাকতা পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন। মাস শেষে শিশু
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা খুশি হয়ে কেউ ১শ, কেউ দেড়শ, কেউবা ২শ
টাকা দিয়ে থাকেন তাকে, তাতেই শিক্ষক রমনী কান্ত বেপারী খুশি।
সপ্তাহে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সারে ১২ টা
পযন্ত শিশুদের পড়া-লেখা করানো হয়।
বর্তমানে এখানে ২৫-৩০ জন শিশু
শিক্ষার্থী পাঠদানে করাচ্ছেন। তার কাছে পাঠদান নিয়ে এলাকার
অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বড়-বড় পদে চাকুরী করে আজ
প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেখা গেছে একই ঘরে বাবা তার কাছে হাতে
খড়ি নিয়েছেন, পরবর্তিতে ছেলেও তার কাছে হাতে খড়ি নিয়েছেন,
বর্তমানে তার কাছে নাতী হাতে খড়ি নিচ্ছেন। ব্যাক্তি জীবনে রমনী
কান্ত বেপারীর স্ত্রী রুম্পাকে নিয়ে তার সংসার। বাড়িতে একটি দো-
চালা টিনের ঘরে তাদের বসবাস, একমাত্র ছেলে তাপস বেপারী একটি
বে-সরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। রমনী কান্ত বেপারীর কিছু
কৃষি জমি রয়েছে, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা না পেলেও তার
নামে রয়েছে বয়স্ক ভাতার কার্ড। রমনী কান্ত বেপারী বলেন স্বাধীনতার
আগে থেকে এখানে বসে এলাকার ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের
প্রাইভেট পড়িয়ে আসছি, যতদিন বেচে আছি এ পেশায় যুক্ত থেকে
মড়তে চাই। শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিপ্রা পাত্র বলেন, আমার
মেয়েকে রমনী স্যারের কাছে পড়াতে নিয়ে এসেছি, স্যার খুবই ভাল
পড়ান। আরেক অভিভাবক কমল মন্ডল বলেন, এই স্যারের কাছে আমার বাবা
পরেছে, আমি পরেছি, এখন আমার ছেলেও পড়ছে। রাংতা সার্বজনীন
দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রনজিত বৈদ্য বলেন ,স্বাধীনতার
আগে থেকে রমনী কান্ত বেপারী এখানে বসে এলাকার শিশুদের
প্রাইভেট পড়িয়ে আসছে, তার কারনে এলাকার অসহায় পরিবারের
ছেলে-মেয়েরা পড়া-লেখার সুযোগ পাচ্ছে।