আমিনুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়, রয়েছে নানা প্রশ্ন। অনুমোদন পাওয়া কমিটির বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে বয়স জালিয়াতি, ব্যবসায়ী, বিবাহিত, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য সেবন ও ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ।
২০২১ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে এম. এ সিফাদ কোরাইশী সুমনকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং রাজিদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ওই কমিটির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে সাটুরিয়া থানায় ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর দায়ের করা হয় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা। ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদকও মো. শামীউর রহমান বিবাহিত এবং হরিরামপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে। সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান মিম মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচারিত হয়। যদিও তিনি এ বিষয়ে দাবি করেন, ভিডিও ফুটেজের ব্যক্তি তিনি নন। ছবি ও ভিডিও সুপার এডিটিং করা বলে দাবি তার।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের দেওয়া বিভিন্ন ইউনিটে মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং বিএনপি পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কমিটি দেওয়ায় চলছে সমালোচনার ঝড়।
জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীরা মনের ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকবে সবদিক দিয়ে ক্লিন ইমেজের এবং আওয়ামী লীগের পরিবারের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দেখা গেছে বিভিন্ন ইউনিটে মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং বিএনপি পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কমিটি দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি শিবালয় সদর উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে মাদকসেবী সজিবুর রহমান ইফতীকে সভাপতি ও বিএনপি পরিবারের সন্তান আদিত্য পণ্ডিত রিশাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
তবে ইফতির দাবি তার মাদক সেবনের ছবিটিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি নিয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
অপরদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর এবং ২৭ সেপ্টেম্বর শিবালয় উপজেলার কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। ওই কর্মীসভায় মাদকসেবী ও বিএনপি পরিবারের এবং বিএনপির এক সময়ের একনিষ্ঠ কর্মীরাও পদপ্রত্যাশী বলে জানা যায়।
এর মধ্যে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাদক সেবনে অভিযুক্ত নাজমুল হাসান মিম সভাপতি পদে পদপ্রার্থী হতে পারেন এবং দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতোয়ার রহমান সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুর রহমান রাজু সধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক শেখ পলাশ সধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আতোয়ার একসময়ের বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। আতোয়ার ইতোপূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে মতিলাল ডিগ্রি কলেজের সহ-সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন।
এছাড়াও আতোয়ার ভূমি দখল ও অবৈধভাবে বালু মাটির ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। হাবিবুর রহমান রাজুর বিরুদ্ধে বিবাহিত এবং নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাবিবুর রহমান রাজুর ইতোপূর্বে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছিলেন। শেখ পলাশও মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের নামে ইতোপূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর বলেন, কমিটিতে যেন মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং বিএনপি পরিবারের কেউ পদ না পায় সেজন্য জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গুরুত্ব দেবেন এবং ছাত্রলীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ এমন প্রার্থীকে পদ দেবেন এমনটাই আমাদের দাবি।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সর্বদা মাদকের বিরুদ্ধে। যে মুখে মা ডাক হয়, সে মুখে মাদক নয় এই স্লোগানে জেলা ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। যদি কোনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মাদকের সঙ্গে এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকে তবে যাচাই করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরবর্তী সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি দেওয়া হবে তাতে অবশ্যই বিষয়গুলি বিবেচনা করে কমিটি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।