মোঃ আরাফাত খন্দকার, জেলাপ্রতিনিধি, গাজীপুর:
গাজীপুরের কালীগঞ্জের বক্তারপুর ইউনিয়নের মাজুখান গ্রামের মোঃ আক্তার হোসেন শেখের এক মাত্র পুত্র হাফেজ তাওহিদ শেখ (১৭) পেশায় একজন রাজ যোগালী। সে নরসিংদী জেলার শাসপুর দারুল উলুম হোসাইনীয়া মাদ্রাসা থেকে ২০২১ সালে হাফেজি সম্পন্ন করে। সে কাজের সন্ধানে ০২ জুলাই ২০২৩ রোজ রবিবার বিকাল আনুমানিক ৫ ঘটিকার সময় ফুলদি বাঘপাড়া গ্রামের ঠিকাদার হোসেনের (৪৫) কাছে কাজের খবর জানতে যায়।
সেখান থেকে কাজের খবর নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ফুলদি বাজারে পৌঁছালে আজমাইল সরকারের ছেলে জীবি খাঁন(১৮), সুরুজ আলী সরকারের ছেলে সৈরভ(১৯) এবং মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে ইমরানের (২০) সাথে রাস্তায় অটোরিকশায় দেখা হয়া।
তারা সবাই অটোরিকশা করে বাড়িতে যাওয়ার সময় তাওহীদের সাথে সৌরভ ঔ ইমরানের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাওহিদকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে মাথার পিছনে আঘাত করে কাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম করলে তাওহিদ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সৌরভ ও ইমরান তাকে ধাক্কা দিয়ে স্থানীয় মনিরের দোকানের সামনে ফেলে দিয়ে দ্রুত অটোরিকশা নিয়ে সরে পড়ে।
প্রায় সন্ধ্যা ৭ টার দিকে স্থানীয় টাইলস মিস্ত্রি ছাত্তার(২৩) তাওহিদকে রাস্তার পার্শ্বে পরে থাকতে দেখে তাওহিদের চাচা আসাদুজ্জামানকে(২৭) ফোন দেয়। আসাদুজ্জামান দ্রুত মনিরের দোকানের সামনে যায়। গিয়ে দেখে প্রমুখ ব্যক্তিরা তাওহিদকে রিকশায় করে ছৌল্লার মোড় শফিকের ফার্মাসিতে নিয়ে যায়। তখন তাওহিদের কান ও মাথার পিছন দিক থেকে অঝোরে রক্তখরন হচ্ছে।
ওখান থেকে তাকে সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পর তার অবস্থার অবনতি দেখে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
পরে এম্বুলেন্স যোগে তাকে রাত ৯:৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ১২:৪৫ মিনিটে তার অবস্থার বেগতিক দেখে আইসিও তে নেয়া হয় এবং ঐ রাতেই আনুমানিক ৩:০০ঘটিকার সময় কর্তব্যরত ডাক্তারা তাওহিদকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়না তদন্তের পর কালীগঞ্জ থানাকে বিষয়টি অবগত পর ৩ জুলাই সোমবার রাতে এশার নামাজের পর বাইতুর রহমান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজার শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। পরিবারের সূত্রে জানা যায় কথাকাটাকাটির জের ধরে তাওহিদকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তাওহিদকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়।
দোকানদার মনি জানান মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে দোকানের সামনের দিক বন্ধ করে পিছনদিক দিয়ে বের হয়ে এসে আওয়াল নামক এক ব্যক্তির টর্স লাইটের আলোয় একজনকে রাস্তার দক্ষিণপাশে পড়ে থাকতে দেখে তাওহিদকে উঠিয়ে মনিরের সহযোগিতায় দোকানের বেঞ্চে রেখে মাথায় পানি দেওয়া হয় এবং চোখ মেলার পর তাওহিদকে প্রমুখ ব্যক্তিরা ছৌল্লার মোড় শফিকের ফার্মাসিতে নিয়ে গেলে দোকানদার মনির ও আউয়াল নামাজ আদায় করতে মসজিদে চলে যায়। ঐ দোকানের সামনে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে একাধিক স্থানীরা জানায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সৌরভের(১৯) কাছে জানতে চাওয়া হলে সে জানায় তাওহিদ কাজের খবর নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ফুলদি বাজারে পৌঁছালে রাস্তায় অটোরিকশায় দেখা হয়া। কিন্তু কোন প্রকার কথাকাটাকাটি বা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। তাওহিদ অটোরিকশার পিছনে ডান দিকে বসা ছিল এবং বাকিরা সামনে বসা ছিল। তাওহিদ বারবার মাথা অটোরিকশার বাহিরে বের করছিল।
সামনের দিক থেকে একটি সিএনজি তাওহিদের মাথায় আঘাত করলে সে রাস্তায় পরে যায়। কিন্তু তাদের অটোরিকশাটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকার কারনে অনেক সামনে চলে আসে পরে গাড়ি ঘুরিয়ে পিছনে তাওহিদের খোঁজে আসলে কিছু রাস্তা আসার পরে রাস্তায় অনেক মানুষ তাওহিদকে অন্য আরেকটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা ভয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে আসে। তাওহিদের জানাজার নামাজে শরিক হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নের জবাবে সে আমাদের জানায় পুলিশের ভয়ে তারা কেউই জানাজার নামাজে আংশ নেয় নি। অভিযুক্ত জীবি খাঁন ও ইমরানকে বাড়িতে পাওয়া যায় নি এবং মোবাইল নাম্বারও পাওয়া যায় নি।
তাওহিদের পিতা আক্তার হোসেন জানান আমার পুত্রের মতো কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। প্রশাসনের কাছে দাবি উপযুক্ত তদন্ত পূর্বক পরিকল্পিত হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান আমাদের জানান বুধবার রাতে নিহতের বাবা মোঃ আক্তার হোসেন শেখ বাদি হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি যাহা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।