আল আমিন খোকন, জেলা প্রতিনিধি- রাজবাড়ী:
রাজবাড়ী সদরের দাদশী ইউনিয়নের লক্ষ্মীকোল পালপাড়ার জগন্নাথ চন্দ্র পালের তৈরি ওয়ালমেট দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে সুদূর নিউইয়র্কে। এছাড়া তার তৈরি স্ট্যাচু, ট্যারাকোটা, ফুলদানি ও পুতুলের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। বর্তমানে তার অধীনে কাজ করছেন ১০ জন কারিগর। উন্নত প্রশিক্ষণ ও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও কিছু করতে চান।
কিন্তু প্লাস্টিক, মেলামাইন ও সিলভারের হরেক পণ্যের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী মাটির পণ্য। এসব পণ্য তৈরির উপকরণের দাম বেশি ও পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই ছাড়ছেন বাপ-দাদার পেশা। এখন দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পারিবারিক খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। যার কারণে তাদের সন্তানরা এখন ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।কাদা-মাটি প্রক্রিয়াজাত করে মৃৎশিল্পীদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় একেকটি মাটির পাত্র। পরবর্তীতে তা রোদে শুকিয়ে বিশেষায়িত চুলার আগুনে পুড়িয়ে পরিণত করা হয় পূর্ণাঙ্গ একটি মাটির পাত্র। কিন্তু আগের মতো আর ব্যবস্থা নেই কুমারপাড়ায়। মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরির দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমানে মৃৎশিল্পীরা ওয়ালমেট, পুতুল, চাড়ি, মালসা, দইয়ের খুটি, চালনী, পিঠার সাজসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে সময় পার করলেও বাজারজাতকরণ নিয়ে থাকেন দুশ্চিন্তায়। কারণ এখন সব ক্ষেত্রেই প্লাস্টিক, মেলামাইন ও সিলভারের পণ্যের বহুবিদ ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে হুমকির মুখে মৃৎশিল্প।
এ পেশাকে বাঁচাতে মৎশিল্পীদের উন্নত প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা, সনাতন থেকে আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার ও মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন মৃৎশিল্পীরা।তারপরও বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের লক্ষ্মীকোল পালপাড়ার ৫০টি পরিবার। এখানকার ৫০টি পরিবারের প্রায় ৩শ’ জন এ পেশায় জড়িত।মৃৎশিল্পীরা বলেন, বর্তমানে মাটির পণ্যের চাহিদা অনেক কম। মাটির একটি পণ্য তৈরি করতে অনেক শ্রম দিতে হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম চাইলে প্লাস্টিকের পণ্যের সঙ্গে তুলনা করে। আগে তাদের তৈরি মাটির পণ্য গ্রামীণ মেলায় বিক্রি হতো, কিন্তু এখন তার কদর নেই। প্লাস্টিকের পণ্য পড়লে ভাঙে না, সহজলভ্য। ফলে মাটির পণ্যের চাহিদা কম।
তারা আরও বলেন, তাদের এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবারের ৩শো জন এ পেশার সঙ্গে জড়িত। প্লাস্টিকের পণ্যের কারণে তাদের মাটির পণ্য চলছে না। হোটেলে মাটির তৈরি দইয়ের খুঁটি চলতো, কিন্তু এখন প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করায় সেটিও বন্ধ হওয়ার পথে। তাছাড়া বর্তমানে মাটিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম অনেক বেশি। সব মিলিয়ে তারা ভালো নেই।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, মৃৎশিল্পীদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সঠিক তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী চাহিদার ভিত্তিতে জেলা কার্যালয় থেকে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন তারা। ভবিষ্যতে বিসিকে একটি ডিসপ্লে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি করা হলে সেখানে তাদের পণ্য ডিসপ্লে করতে পারবেন।