আরফিনুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি – নীলফামারী
তিন মাস আগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন নীলফামারী ডিমলা খগা বড়বাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিমু আক্তার। ফরম পূরণের সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার কাছে ২৪০০ টাকা আদায়ও করে। এরপর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শিমু। কিন্তু, স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলে প্রবেশপত্র হাতে পাননি তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিমু আক্তার উপজেলার নিজ সুন্দর খাতা গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। তিনি ওই বিদ্যালয়ের মানবিক শাখা থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা। অভিযোগটি উঠেছে ডিমলা খগা বড়বাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফা আক্তার লিজার বিরুদ্ধে ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যথা সময়ে শিমু আক্তারের ফরম পূরণের এর জন্য দুই হাজার চারশত টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করেননি। সম্প্রতি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক জানান শিমুর ফরম পূরণ হয়নি। পরে প্রধান শিক্ষকের নিকট এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করেন। এ ঘটনায় পরীক্ষা দিতে পারবেনা জেনে ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
রবিউল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকের এরকম অবহেলার কারণে আমার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়নি। ফরম পূরণের জন্য আরো ছয় হাজার টাকা চেয়েছেন তিনি । আমি গরীব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো। তিনি বলেন, পরীক্ষা দিতে না পেরে যদি আমার মেয়ের কিছু হয়ে যায় এর দায়ভার কে নেবে?
শিক্ষার্থী শিমু আকতার জানান, আমি প্রধান ম্যামকে ফরম পূরণের জন্য টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু, প্রবেশপত্র নিতে গিয়ে দেখি আমার নামে কোনো প্রবেশপত্র আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমার এসএসসি ফরম পূরণ হয়নি। ভুল করে আমার নামের আরেকজন ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়েছে। শুরুতে ঘটনাটি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না শিমু। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। দশ বছর লেখাপড়া করে এসএসসি পরীক্ষার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থী শিমু তা বুঝি আর পূরণ হলো না। তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে শিমু বলেন, এখন স্কুল থেকে আমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে বলছেন। আমি এর বিচার চাই।
বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মারুফা আক্তারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত। ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। আজ ৩০ এপ্রিল থেকে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।