গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই। রাত সোয়া ১১টার দিকে, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মামুন মোস্তাফী।
সোমবার (১০ এপ্রিল) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে। তার কিডনির ডায়ালাইসিস শুরু হয় মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিট থেকে । একই সঙ্গে চলে অন্যান্য চিকিৎসা। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। এড় আগে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে গত ৭ এপ্রিল মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ধানমন্ডির নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিডনির জটিলতার পাশাপাশি গত কয়েকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায়ও ভুগছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অবদান উল্লেখ্যযোগ্য। এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন তার বাবার শিক্ষক ছিলেন। দশ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। মেট্রিকুলেশন ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৬৭ সালে।
বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন। বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয় তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি।