কেএম আজাদ রহমান, আগৈলঝাড়া (বরিশাল):
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রথমবারের মত বাণিজ্যিকভাবে চাষহচ্ছে বহু ঔষুধি গুণসম্পন্ন অ্যালোভেরার বা ঘৃতকুমারী’র। প্রথমে শখের বসে পরে বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ ঔষধি এ গাছ চাষ করেআর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে উপজেলার বারপাইকা গ্রামের কৃষক কিশোর মন্ডল।
অ্যালোভেরার বা ঘৃতকুমারী চাষে কৃষককিশোর মন্ডলের সফলতা দেখে এ গাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে বিভিন্ন এলাকার লোকজন। অ্যালোভেরার বা ঘৃতকুমারী সুপরিচিত ভেষজ ঔষধি গুনসম্পন্ন একটি গাছ। এ গাছের পুরো অংশটিইঔষুধি হিসেবে বহুল ব্যবহার করার ফলে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছেকয়েকগুন। মূলত এ গাছের পাতার ভিতরের পানি রংয়ের সাদা অংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেশের মধ্যে যশোর, নাটোর, শেরপুরঅ্যালোভেরা চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামে প্রথমবারের মত বাণিজ্যিকভাবে অ্যালোভেরা চাষ করছেন কৃষক কিশোর মন্ডল।
শখের বসে প্রায় ৮-১০ বছর পূর্বে ঝালকাঠী জেলার সরূপকাঠী থেকে একটি অ্যালোভেরা গাছ কিনে এনে বাড়িতে রোপন করে তিনি। সেই একটি গাছের চারা থেকে বহু চারা তৈরি করে বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে অ্যালোভেরা চাষে আগ্রহ বাড়ে তার। অ্যালোভেরা চাষের জন্য আলাদা জমি না থাকায় বর্তমানে তার ৮ শতক জায়গার নিজস্ব আম বাগানের মধ্যে ৪টি বেড করে একফুট দূরত্বে ৬ ইঞ্চি ফাকা করে ২৫’শ অ্যালোভেরা চারা রোপন করেছেন তিনি। রোপনকৃত চারা বড় হওয়ায় ইতিমধ্যে অ্যালোভেরা গাছের পাতা ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছেন কিশোর। এছাড়াও তার বাগানে বর্তমানে অ্যালোভেরার ছোট চারা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার।
অল্প পরিশ্রম ও স্বল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় অ্যালোভেরা চাষের দিকে ঝুঁকছেন ওই গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ। এলাকাবাসী অপূর্ব সরকার ও নমিতা রায় জানান, কিশোর মন্ডলের বাগানটি উপজেলার মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিক অ্যালোভেরা বাগান।
এখানে উৎপাদিত অ্যালোভেরার চারা সুলভ ও মানে ভালো হওয়ায় অনেকেই এই বাগান থেকে ক্রয় করার জন্য আসে। চারা ছাড়াও
অ্যালোভেরার গাছের পাতা কিনতে এবং বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে বহু মানুষ। কৃষক কিশোর চন্দ্র মন্ডল জানান, প্রথমে শখের বসে সরূপকাঠী থেকে একটি অ্যালোভেরা গাছ কিনে এনে বাড়িতে রোপন করেন। সেই একটি চারা থেকে বহু চারা তৈরি করে বিক্রি করে খরচ বাদ
দিয়ে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা লাভ হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে অ্যালোভেরা চাষে আগ্রহ বাড়ে তার।
একটি চারা থেকে বছরে কয়েক শত চারা উৎপাদন করা যায়। এরপর ৮ শতক জায়গার নিজস্ব আম বাগানের মধ্যে ৪টি বেড করে ২৫’শ ৪টি অ্যালোভেরা চারা রোপন করেন তিনি। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ছাড়া শুধুমাত্র নিজের প্রস্তুতকৃত জৈব সার ব্যবহার করছেন তিনি। আর অ্যালোভেরা গাছের পাতা পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে স্প্রে এর মাধ্যমে নিম পাতার রস ব্যবহার করা হয়। অ্যালোভেরা চারা রোপন থেকে শুরু করে ওই বাগানে কোন শ্রমিক কাজে লাগানো হয়নি। নিজেই কাজ করেছেন ওই বাগানে। মাঝে মধ্যে তার স্ত্রী এ কাজে সহয়তা করে তাকে।
ইতোমধ্যে ওই বাগান থেকে অ্যালোভেরা গাছের পাতা বিক্রি শুরু করেছেন কিশোর। তিনি আরো জানান এ বাগান থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ভবিষ্যতে উঁচু জমি ইজারা নিয়ে অ্যালোভেরা বাগান বড় করবেন তিনি। বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ ঔষধি এ গাছ চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তিনি। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাষ মন্ডল সমকালকে জানান, বহু ঔষুধি গুণাগুণ সম্পন্ন অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী বর্তমানে সাবান, ফেজওয়াস, লোশন, ক্রীম, স্যাম্পুসহ বিভিন্ন উন্নতমানের কসমেটিকস্ধসঢ়; ও দামী কেক তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পুষ্টিতে ভরপুর যা রান্না করে খাওয়া যায়। মুখমন্ডলে কালো দাগে ও পোরা দাগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এবং অর্শ্ব রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ঔষধ হিসেবে
ব্যবহার করা হয়।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত কিশোর মন্ডলের অ্যালোভেরা বাগান পরিদর্শন করে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বহু ঔষুধি গুণসম্পন্ন এই অ্যালোভেরার বা ঘৃতকুমারী’র চাষে আগ্রহ বাড়াতে তাকে আর্থিক সহয়তার কথা জানান তিনি।