ড. নাছিমা ইসলাম চৌধুরী (বৃষ্টি):
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা ব্যাক্তির পিতা-মাতা সর্বদা নিজেদের হীন মন্নতায় ভুগেন। তারা অনেক সময় সামাজিক ও পারিবারিক চাপে মনে করেন এই ধরনের সন্তানের জন্য তারাই দায়ী। কিন্তু বিষয়টি তা নয়, আমাদের সমাজে চলমান নানা ধরনের কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণার কারণে আমরা ধরেই নেই একটি ঘরে এমন বিশেষ শিশুদের জন্ম মানেই হচ্ছে বাবা-মা কেউ না কেউ দায়ী। তার হয়তো কোনো পাপ ছিলো, এর জন্যই সৃষ্টিকর্তা তাদের শাস্তি দিচ্ছে ।
এর ফল স্বরুপ –
ডিপ্রেশন: অনেক পিতা মাতা বিষন্নতায় ভুগেন, বিষণ্নতা এমন একটি মানসিক সমস্যা, যেখানে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে কোনো ব্যক্তি হতাশ, মন খারাপ এবং সবকিছুর প্রতি অনীহা বোধ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিষণ্নতার কারণে ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষাগত, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা ব্যাহত হয়। এরফলে ব্যক্তি নিজের যেমন সর্বক্ষেত্রে অনিহা প্রকাশ পায় আবার বাচ্চার প্রতিও উদাসীন হয়ে পরেন।
নিজেকে দোষী মনে করা: অন্যের সাথে নিজের বাচ্চার তুলনার করে নিজেকে দোষী মনে করা। এর ফলে বাচ্চাটার প্রতি যতটুকু ভালোবাসা ও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন সেই সময়টা না দেওয়া। এতে করে নিজে এবং শিশু উভয়ই সমান ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
লজ্জা বোধ করা :
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা ব্যাক্তিকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া বা তাকে নিয়ে কোন কাজ করতে লজ্জা বোধ করা, মানুষের সামনে না নেওয়া তার প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসা না দেওয়া , তাকে জন মানুষ থেকে লুকিয়ে রাখা। যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে। শিশুকে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করা, এতে করে শিশুর ভিতরে ছোট বেলা থেকে হীন মন্যতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সমাজে নৃগ্রিহিত তার নিজের উপর কনফিডেন্স কমে যাওয়া।
ভয় কাজ করা: আমার সন্তানের প্রতিবন্ধীতা আছে, সে কি সমাজে চলতে পারবে, আট-দশ জনের সাথে।
তুলনা করা: একটি নিউরোটিপিক্যাল বাচ্চা সব কাজ করতে পারে কিন্তু আমার বাচ্চা কেন পারে না, তাকে পারতেই হবে এতে করে যেমন নিজের মানসিক ভাবে প্রেসার পরে তেমন সন্তানের উপরও প্রভাব ফেলে।
মেনে না নেওয়া বা কেন আমার বাচ্চা প্রতিবন্ধী হবে :
অন্যের বাচ্চারা ক্লাসে ফার্স্ট হয়, পড়াশোনায় ভালো কিন্তু ও কেন পারবে না, ওকেও পারতে হবে। ও কেন পারবে না, এই পারার জন্য একটার পর একটা থেরাপি সেশন দেওয়া যেন বাচ্চা একদিনে প্রতিবন্ধকতা থেকে বের হয়ে আসবে, ওরা যে প্রথমে একজন মানুষ সেটা আমরা ভুলে যাই।
গ্রহণ করে নেওয়া: আমার সন্তান যেমনি হোক তাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আমার জন্য নেয়ামত স্বরুপ, এটা আমার জন্য দুনিয়াতে পরীক্ষা আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসেন তাকেই পরীক্ষা করেন তাই আমাকে যা দিয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা।
ওদের জগৎ টা যে আমাদের থেকে আলাদা আরও সুন্দর সেটা আমরা মানতে রাজি না, সেই মানা না মানার যুদ্ধ শুরু হয় ব্যাক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন , সামাজিক জীবন থেকে ।
আমাদের থেকে যারা একটু ভিন্ন তাদের কেই আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়, অথচ আমরা চাইলেই ওদের ওদের মতো করে ওদের জগৎ কে চিনতে পারি।